ঠিক কোথায় সচিন তেন্ডুলকরের থেকে আলাদা বিরাট কোহলি?
ঠিক কোথায় সচিন তেন্ডুলকরের থেকে আলাদা বিরাট কোহলি?
দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্টে বিক্রম দেখানো ভারত নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদেরই মাটিতে কেন ধরাশায়ী হল ভারত, সেই প্রশ্নই ঘুরছে ক্রিকেট মহলে। সেই সঙ্গে আর যে প্রশ্ন ক্রিকেট প্রেমীদের মনে উঁকি দিতে শুরু করেছে, তা হল মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে বিরাট কোহলির তুলনা। দুই কিংবদন্তির মধ্যে পার্থক্য কোথায়, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সচিন তেন্ডুলকর
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদেরই মাটিতে ১১টি টেস্ট খেলেছেন সচিন তেন্ডুলকর। ১৮টি ইনিংসে ৪৯.৫৩-র গড়ে ৮৪২ রান করেছেন মাস্টার ব্লাস্টার। দুটি শতরান রয়েছে তাঁর। সর্বোচ্চ ১৬০।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিরাট কোহলি
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট রেকর্ডে সে তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কিউয়ি-দের বিরুদ্ধে তাদেরই মাঠে ৮টি টেস্ট ইনিংস খেলে মাত্র ২৫২ রান এসেছে বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে। একটি শতরান রয়েছে তাঁর। সর্বোচ্চ ১০৫। অথচ সবমিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৭টি টেস্ট ইনিংস খেলে টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়কের ঝুলিতে রয়েছে ৭৭৩ রান। ২১১ তাঁর সর্বোচ্চ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজের চারটি ইনিংস মিলিয়ে অর্ধশতরানও করতে পারেননি ভিকে।
পিছিয়ে বিরাট
যদিও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সচিন তেন্ডুলকরের থেকে অনেক কম টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন বিরাট কোহলি। এখনও তিনি আরও কিছুদিন ক্রিকেট খেলবেন। ব্ল্য়াক ক্যাপদের দেশে আরও বেশ কয়েকটি টেস্ট সিরিজও খেলবেন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক। কিন্তু সচিনের মতো রেকর্ড তিনি গড়তে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ক্রিকেট প্রেমীদের মনে।
সচিনের টেস্ট রেকর্ড ছুঁতে পারবেন কী বিরাট
কেরিয়ারে ২০০টি টেস্ট খেলেছেন সচিন তেন্ডুলকর। ৫৩.৭৮-র গড়ে ১৫৯২১ রান করেছেন মাস্টার ব্লাস্টার। লাল বলের ক্রিকেটে ৫১টি শতরান রয়েছে সচিনের। অন্যদিকে ভারতের হয়ে ৮৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৭২০২ রান সংগ্রহ করেছেন বিরাট কোহলি। ২৭টি শতরান রয়েছে তাঁর। ক্রিকেট বিশ্বে একের পর এক রেকর্ড টপকে গেলেও সচিন তেন্ডুলকরকে ছুঁতে পারবেন কি বিরাট কোহলি, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ক্রিকেট প্রেমীরা।
কেন দ্বিমত
যাঁরা মনে করেন যে বিরাট কোহলির পক্ষে সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড টপকে যাওয়া সম্ভব, তাঁদের মূল অস্ত্র ভারত অধিনায়কের ফর্ম। আর যাঁরা মনে করেন যে তা সম্ভব নয়, তাঁদের কাছে যুক্তি রয়েছে বেশ কিছু।
বয়স
১৬ বছর বয়সে ভারতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। দেশের হয়ে ২০০টি টেস্ট খেলেছেন তিনি। অন্যদিকে বিরাট কোহলির বয়স ৩১। অন্তত আর পাঁচ বছর নিয়মিত ক্রিকেট খেলবেন তিনি। তাতে অতগুলি ম্যাচ তো দূর, এত রান করাও সম্ভব নয় বলে অনেকের দাবি।
ব্যাডপ্যাচ
সচিন তেন্ডুলকরের জীবনে যে ব্যাডপ্যাচ আসেনি, তা কিন্তু নয়। তবে তা মাস্টার ব্লাস্টারের কেরিয়ারে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে ক্রিকেট প্রেমীদের দাবি। সে তুলনায় টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক বিরাট কোহলির কেরিয়ারে ব্যর্থতার পরিমাণ বেশি বলে দাবি। ২০১১, ২০১৪, ২০১৮-র পর চলতি বছরও কার্যত রান খরার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন ভিকে।
মানসিকতা
ক্রিকেট প্রেমীদের একাংশের দাবি, মানসিকতার দিক থেকে বিরাট কোহলির থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর। এমনিই তিনি ক্রিকেটের ভগবান হয়ে যাননি। বিরাটের থেকে সচিন অনেক বেশি ধীর, স্থির এবং শান্ত বলে দাবি ক্রিকেট প্রেমীদের। মাঠে এবং মাঠের বাইরে সচিনের ক্রিকেটার সুলভ আচরণ তাঁকে লেজেন্ড বানিয়েছে। কঠিন পরিস্থিতিতেও কীভাবে মাথা ঠাণ্ডা করে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়, তা বারবার দেখিয়েছেন মাস্টার ব্লাস্টার। কিন্তু বিরাট কোহলির মধ্যে খারাপ পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য ধরে রাখার মানসিকতা নেই বলে মনে করেন ক্রিকেট প্রেমীদের একাংশ। রাফ অ্যান্ড টাফ বিরাট নিজের ব্যবহারের জন্য কেরিয়ারে একাধিকবার বিপদে পড়েছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদেরই মাটিতে টেস্টে পর্যুদস্ত হয়ে মাঠে প্রতিপক্ষের অধিনায়কের প্রতি বিরাট কোহলির আচরণ ফের সমালোচিত হয়েছে সব মহলে।