আইএসএল ফিরে দেখা: ৫ বছরের লিগ-ইতিহাসের সেরা ৫টি ম্য়াচ
আইএসএল-এর ইতিহাসের সেরা ৫ টি ম্যাচ।
ফিফা আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচের জন্য ফের একবার বিরতি রয়েছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ২০১৮-১৯ মরসুমে। শনিবার জর্ডনের রাজধানী আম্মানে সেই দেশের জাতীয় দলের মুখোমুখি হওয়ার কথা ভারতের জাতীয় দলের। এছাড়া আইএসএল-এ খেলা বিদেশীরাও অনেকেই নিজেদের জাতীয় দলের দায়িত্বে ব্যস্ত।
এই নিয়ে লিগের ৫ বছর চলছে। এর মধ্যেই গোলসংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। বয়স কম হলেো এর মধ্যেই নিঃসন্দেহে বেশ কিছু জমজমাট উত্তেজনাকর ফুটবল ম্যাচ উপহার দিয়েছে এই লিগ। লিগের বিরতিতে ফিরে দেখা যাক সেই ইতিহাস। আইএসএল-এর সেরা ম্যাচগুলির মধ্য থেকে ৫টি ম্যাচ বেছে নিল বেঙ্গলি মাইখেল।
শাহরুখ খান
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান মুন্নাভাই এমবিবিএস, থ্রি ইডিয়টস ও লগানের মতো কালজয়ী সিনেমার অফার ফিরিয়ে দেন।
প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়া এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, প্রথমে এই সিনেমাগুলির প্রস্তাব নিয়ে তাঁরা শাহরুখের কাছ গিয়েছিলেন। শাহরুখ না বলে দেওয়ায় অন্য অভিনেতাকে প্রস্তাব দেন, বাকিটা ইতিহাস।
এফসি গোয়া বনাম মুম্বই সিটি এফসি, ২০১৫
৩৪ মিনিট পর্যন্ত এই ম্যাচের স্কোর ছিল ০-০। দুই লের সমর্থকরাই ভেবেছিলেন একটি লো স্কোরিং ম্যাচ হতে চলেছে। হয়তো কোনও এক মুহূর্তের ম্যাজিকে নির্ধারিত হবে ম্যাচের ফল। কিন্তু এরপর যা ঘটেছিল তা এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এই ম্যাচকে সবচেয়ে বিস্ময়কর ম্যাচগুলির মধ্যে স্থান করে দিয়েছে। গোয়ার হয়ে গোল করা শুরু করেছিলেন হাওকিপ। শেষ পর্ত ওই ম্যাচে তিনি হ্যাটট্রিক করেছিলেন। হ্যাটট্রিক এসেছিল ডুডু ওমাগবেমি-র পা থেকেও। স্টপ-এজ টাইমে মুম্বইয়ের জালে আরও এ বল ঠেলেন রিনাল্ডো অলিভেইরা। এফসি গোয়া ম্যাচে জয় পেয়েছিল ৭-০ ব্যবধানে, যা এখনও টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জয়ের ব্যাবধান। সেই বছর এফসি গোয়া লিগ টেবিলের শীর্ষে শেষ করেছিল। তবে ৬০ মিনিটের যে নিষ্ঠুর, আক্রমণাত্মক ফুটবলের নজির তারা রেখেছিল তা এখনও তাদের সমর্থকদের মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
ঐশ্বর্য রাই বচ্চন
ছোট বচ্চন পত্নীকেই 'রাজা হিন্দুস্থানি' সিনেমায় নায়িকার রোলে নিতে চেয়েছিলেন পরিচালক ধর্মেশ দর্শন। তবে চিত্রনাট্য পছন্দ না হওয়ায় ওই সিনেমা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ঐশ্বর্য। আর এই সিনেমাই অভিনয়ই করিশ্মা কাপুরকে লাইমলাইটে নিয়ে আসে।
এফসি গোয়া বনাম চেন্নাইন এফসি, ২০১৬
ম্যাচের গুরুত্ব না থাকলেও শুধুমাত্র ফুটবলের গুনেই কোনও কোনও ম্যাচ সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে পরিণত হতে পারে। ২০১৬ সালের আইএসএল-এ চেন্নাইন এফসির বিরুদ্ধে এফসি গোয়ার ৫-৪-এ জেতা ম্যাচ ছিল সেই গোত্রের। প্রথম ৫ মিনিটে ২ গোল হয়ে গিয়েছিল। প্রথম আধঘন্টায় আরো ৩ গোল। সব মিলিয়ে প্রথমার্ধে চেন্নাইন এগিয়ে ছিল ৩-২ ফলে। খেলার ২০ মিনিট বাকি থাকতে ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিলেন এফসি গোয়ার সাহিল তাভোরা। শেষ ১৫ মিনিটে উত্তেজনা চরমে উঠেছিল। প্রথমে রাফায়েল কোহেলোর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল এফসি গোয়া। এরপর ৮৮ মিনিটে লিভারপুলের কিংবদন্তী জন আর্নে রিসের পেনাল্টি গোলে আবার ম্যাচে সমতা ফিরেছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে ফের জ্বলে ওঠেন সেই সাহিল তাভোরা! ম্যাচে মোট ৯ গোল হয়েছিল যা এখনও আইএসএল-এ একটি খেলায় সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।
হৃত্বিক রোশন
'দিল চাহতা হ্য়ায়' সিনেমায় আকাশের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য হৃত্বিকই ছিলেন প্রথম পছন্দ। তবে সেসময়ে 'কহো না পেয়ার হ্য়ায়' নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তা ফিরিয়ে দেন তিনি। পরে 'স্বদেশ' সিনেমার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন হৃত্বিক যাতে অভিনয় করেন শাহরুখ খান।
চেন্নাইন এফসি বনাম এফসি গোয়া, ২০১৫ (ফাইনাল)
ইন্ডিয়ান সুপার লীগ ২০১৫-এর ফাইনাল ম্যাচ। অনেক সময়ই অতিরিক্ত চাপে এবং দলগুলির সতর্ক ফুটবলের জন্য ফাইনাল ম্যাচ খুব একটা জমজমাট উচ্চতায় পৌঁছয় না। কিন্তু এই ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে সেই কথা বলা যাবে না। ম্যাচের ৬০ মিনিটের মধ্যে দুটি দলই ১টি করে গোল করেছিল। নির্ধারিত সময়ের মাত্র ৩ মিনিট আগে গোল করেন জোফ্রে ম্যাথু। এপর মনে হয়েছিল ফতোরাদা স্টেডিয়ামে প্রথম আইএসএল খেতাব দখল করবে ঘরের দল এফসি গোয়া। কিন্তু অন্যরকম ভেবেছিল চেন্নাইন এফসি। গোল খাওয়ার পর থেকে তারা নাগাড়ে আক্রমণ শানাতে শুরু করে এফসি গোয়ার রক্ষণে। সেই চাপের মুখে ৯০ মিনিটের মাথায় গোয়ার গোলরক্ষক আত্মঘাতি গোল করে বসেন। ফল দাঁড়ায় ২-২। অতি বড় চেন্নাাইন সমর্থকও হয়তো ভেবেছিলেন ম্যাচ পেনাল্টি শুটআউটে গড়াবে। কিন্তু স্টিভেন মেন্ডোজার একটি শটই ফতোরদার গ্যারিকে একেবারে চুপ করিয়ে দিয়েছিল। পূর্ণ নিরবতা নেমে এসেছিল গোয়ার গ্যারি জুড়ে। আর ৩-২ গোলে ম্য়াচ জিতে তাদের প্রথম ট্রফি জিতেছিল চেন্নাইন এফসি।
আমির খান
১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া 'ডর' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রথমে ভাবা হয়েছিল আমিরের নাম। তবে শাহরুখের কপালে শেষে জোটে এই চরিত্র।
কেরালা ব্লাস্টার বনাম এটিকে ২০১৫
আইএসএল প্রথম মরসুমের (২০১৪) ফাইনালের পর দ্বিতীয় মরসুমে এই প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল কেরল ব্লাস্টার্স এবং এটিকে। দুটি দলের কাছেই প্লে অফে যাওয়ার জন্য জয় জরুরি ছিল। এটিকের নলাপ্পান মোহনরাজ ম্যাচের প্রথম গোল করেছিলেন। পেনাল্টি থেকে গোল করে শোধ দেন আন্তোনিও জার্মান। বিরতিতে ফল ছিল ১-১। ৮৪তম মিনিটে জাপানে জন্মানো ভারতীয় জাতীয় দলের তারকা আরাতা ইজুমির গোলে ফের এগিয়ে গিয়েছিল এটিকে। কিন্তু মাত্র ৬০ সেকেন্ডের মধ্যেই আন্তোনিও জার্মান বাঁ-পায়ের চমতকার ফিনিশে সমতা ফিরিয়েছিলেন। এটাই উত্তেজনার শেষ ছিল না। ৯৩তম মিনিটে ইজুমি ফের ১ গোল করে এটিকে-কে ২-৩ গোলে জেতান। অসাধারণ একটি দলগত মুভে গোল করেছিলেন তিনি। এই জয় সেই মরসুমে এটিকে-কে লিগে ফিরিয়ে এনেছিল। শেষ পর্যন্ত লিগ পর্যায়ে তারা দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
অজয় দেবগণ
অভিনেতা অজয় দেবগণ 'করণ অর্জুন' সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
দিল্লি ডায়নামস বনাম এটিকে, ২০১৭
এই ম্যাচে চোট সারিয়ে ফেরা এটিকের মার্কি সাইন ইন রবি কিনকে নামিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজার অ্যাশলি ওয়েস্টউড। আয়ারল্যান্ডের স্ট্রাইকার সেই আস্থার মর্যাদা দিয়েছিলেন জোড়া গোল করে। কিন্তু তাঁর সেই পারফরম্য়ান্স ঢেকে গিয়েছিল দিল্লির দুরন্ত ফিরে আসার কাহিনিতে। প্রথমেই দুটি দল ১টি করে গোল করেছিল। কিন্তু ৩০ মাথায় অল্পসমযের ব্যবধানে ২ গোল করে দলকে ১-৩ গোলে এগিয়ে দিয়েছিলেন কিন। ম্যাচের ২০ মিনিট বাকি থাকতে দিল্লি ডায়নামোস স্ট্রাইকার কালু উচে (চলতি মরসুমে এটিকে-তে) তাঁর দশম গোল করে ১ গোলের ব্যবধান কমান। এর এক মিনিট পরেই সেইত্যাসেন সিং ম্যাচের ফলাফল ৩-৩ করে দেন। শেষ ১৫ মিনিট দুইপক্ষই গোল করার জন্য ঝাঁপিয়েছিল। কিন্তু পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামা মাতিয়াস মিরাবাহেই শেষ পর্যন্ত গোল করে দিল্লিকে ঘরের মাঠে ৪-৩ জয় এনে দিয়েচিলেন। দলের এই অসাধারণ প্রত্য়াবর্তনের কাহিনি ডায়নামোস সমর্থকরা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন।
ড্যানি ডেনজংপা
বলিউডের অন্যতম সেরা খলনায়ক ড্যানিকে প্রথমে 'শোলে' সিনেমার গব্বর সিংয়ের চরিত্রের জন্য ভাবা হয়েছিল। তবে সেসময়ে তিনি ফিরোজ খানের সিনেমা 'ধর্মাত্মা' নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রমেশ সিপ্পির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
দেব আনন্দ
'জঞ্জির', যে সিনেমাটি অমিতাভ বচ্চনকে বলিউডে অ্যাংরি ইয়ং ম্য়ান হিসাবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল, তার প্রস্তাব প্রথমে দেওয়া হয়েছিল দেব আনন্দকে। এরপরে তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে রাজ কুমার, ধর্মেন্দ্র ও রাজেশ খান্নাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সবাই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে অমিতাভ ইনস্পেক্টরের বিজয় খান্নার রোলে অভিনয় করে বলিউডে নিজের জায়গা পাকা করেন।
জুহি চাওলা
জুহি 'রাজা হিন্দুস্তানি', 'দিল তো পাগল হ্যায়', 'জুদাই'-এর মতো সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
কাজল
অভিনেত্রী কাজল 'থ্রি ইডিয়টস' সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
কঙ্গনা রানাউত
'দ্য ডার্টি পিকচার' সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন কঙ্গনা রানাউত। তবে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে তিনি 'তনু ওয়েডস মনু' সিনেমায় অভিনয় করেন এবং এটাই অভিনয় করে ইতিহাস তৈরি করেন বিদ্য়া বালন।
করিনা কাপুর
নবাবপত্নী করিনা কাপুর 'হাম দিল দে চুকে সনম', 'গোলিও কি রাসলীলা রাম-লীলা', 'কাল হো না হো', 'ফ্যাশন', 'ব্ল্য়াক', 'চেন্নাই এক্সপ্রেস' ও 'কুইন' সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
পরে এক পিটিআই সাক্ষাৎকারে বেবো মজা করে বলেনন, "বড় সিনেমা ছেড়ে আমি অন্যকে তারকা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি।"
রাজ কাপুর
১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া হৃষিকেশ মুখোপাধ্য়ায়ের কালজয়ী সিনেমা 'আনন্দ'-এ অভিনয়ের জন্য প্রথম পছন্দ ছিলেন রাজ কাপুর। তবে কোনও কারণে সিনেমাটিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফেরান রাজ কাপুর ও রাজেশ খান্না তাতে অভিনয় করেন।
সঈফ আলি খান
করিনার স্বামী ছোটে নবাব সঈফ আলি খান 'দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে' সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
সলমন খান
'চক দে ইন্ডিয়া', 'বাজিগর' ইত্যাদি সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব প্রথমে সলমনকেই দেওয়া হয়েছিল।
শত্রুঘ্ন সিনহা
'শোলে' সিনেমায় অমিতাভ বচ্চনের চরিত্র 'জয়'-এর জন্য প্রথমে ভাবা হয়েছিল শত্রুঘ্ন সিনহার নাম। তবে পরে ধর্মেন্দ্রর কথায় পরিচালক রমেশ সিপ্পি অমিতাভকে অভিনয়ের সুযোগ দেন।
টুইঙ্কল খান্না
করণ জোহরের রোমান্টিক ড্রামা 'কুচ কুচ হোতা হ্য়ায়'-তে টিনা চরিত্রটির জন্য টুইঙ্কল খান্নাকে মাথায় রেখেই স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছিল। পরে তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে প্রস্তাব দেওয়া হয় করিশ্মা কাপুর ও রবিনা টন্ডনকে। তাঁরাও প্রস্তাবে না বললে অভিনয় করেন রানি মুখোপাধ্য়ায়, বাকিটা সকলের জানা।
এই বাছাইয়ের সময় গত ৪ বছরের আইএসএল-এর ম্যাচগুলিকেই বিচার করা হয়েছে, এই মরসুমের ম্যাচগুলি বাদ দেওয়া হয়েছে। লিগ শেষ হলে এবারের মরসুমের কোনও ম্যাচ এই ৫টি ম্য়াচের স্তরে পৌঁছলো কিনা বিচার করা যাবে। এই বাচাই নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে।