৩১ বছর পর ঘরের মাটিতে ফলো-অন অস্ট্রেলিয়ার, বৃষ্টিতে ফের পণ্ড হল দিনের খেলা
বৃষ্টিভেজা মাঠ আর স্যাঁত-স্যাঁতে আবহাওয়ায় অস্ট্রেলিয়াকে এক্কেবারে পেড়ে ফেলল ভারত। যার জেরে সিডনি টেস্টে এদিন ৬৪ রান যোগ করার মধ্যেই ৪ উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া।
বৃষ্টিভেজা মাঠ আর স্যাঁত-স্যাঁতে আবহাওয়ায় অস্ট্রেলিয়াকে এক্কেবারে পেড়ে ফেলল ভারত। সিডনি টেস্টে এদিন ৬৪ রান যোগ করার মধ্যেই ৪ উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া। অজিদের প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ ৩০০ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ ওভার হতে না হতেই ফের বৃষ্টিতে দিনের খেলা পণ্ড হয়ে যায়। দিনের শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর বিনা উইকেটে ৬। ফলে ভারতের ৩১৬ রানে এগিয়ে। ম্যাচ জিততে শেষ দিনে ভারতের চাই ১০ উইকেট।
৩১ বছরের এই প্রথম ঘরের মাটিতে ফলো-অন করছে অস্ট্রেলিয়া। অজি টিমের টেল এন্ডাররা এতটাই আনপ্রেডিক্টেবল যে শেষ উইকেটে স্টার্ক ও হ্যাজেলউড-এর জুটি-তে মনে হচ্ছিল ফলো-অন হবে না। কিন্তু, কুলদীপ যাদবের বিষাক্ত গুগলিতে হ্যাজেলউড এলবিডবলিউ হতে ফলো-অন-এর সামনে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন কুলদীপ। যা তাঁর ৬ টেস্টের ক্রিকেট কেরিয়ারে একটা ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার নজির। সিরিজে এটাই কুলদীপের প্রথম টেস্ট।
তবে, ভারতের জয়ের পথে এখন সবচেয়ে বড় কাঁটা আবহাওয়া। যে ভাবে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে ও খারাপ আলোর জন্য খেলা বন্ধ হচ্ছে তাতে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা কমছে। কারণ আর মাত্র একটা পুরো দিন পড়ে আছে এই টেস্টে। চতুর্থ দিনে আবহাওয়ার যা পরিস্থিতি তাতে মাত্র ঘণ্টা দুয়েকও সর্বসাকুল্যে খেলা হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া দফতর যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাতে সোমবারও সিডনির আবহাওয়া খারাপ থাকবে।
বৃষ্টির জেরে ভেস্তে যায় চতুর্থ দিনে সিডনি টেস্টের প্রথম সেশনের খেলা। মাঠের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল চতুর্থ দিনে মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত ম্যাচে একটা বলও গড়ায়নি। এই বৃষ্টির জন্য টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষের খেলা-ও ভেস্তে গিয়েছিল। সেখানেও ১ ঘণ্টার মতো খেলার সময় নষ্ট হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া সে সময় ২৩৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। ভারতীয় দলের থিঙ্ক ট্য়াঙ্কের মতে ওই ১ ঘণ্টা সময় পেলে অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট না করতে পারলেও অন্তত আরও কয়েকটি উইকেট তুলে নেওয়া যেত। তার উপরে চতুর্থ দিনের সকালেও দেড় ঘণ্টার মতো খেলার সময় নষ্ট হয়ে যায়।
চতুর্থ দিনে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শেষ হওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা বাদে খেলা শুরু হয়। ৮৩.৩ ওভারে খেলা শুরু হলেও ৮৪.১ ওভারে নতুন বল নেওয়ার অনুমতি দেন আম্পায়রা। আর এতেই আসে সাফল্য। নতুন বল আর স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় সামির রিভার্স স্যুইং-এ অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন কামিন্স। এই কামিন্স-ই বল হাতে যতনা ভয়ঙ্কর ছিলেন ব্যাট হাতে তার থেকে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে মেলবোর্ন টেস্টে ভারতের জয় প্রায় আটকে দিয়েছিলেন। সিডনি টেস্টেও আশঙ্কা ছিল কামিন্সে-এর ব্যাটে না জয়ের সম্ভাবনা দূরে চলে যায়। কিন্তু, শামির দুরন্ত রিভার্স স্যুইং-এর কোনও জবাবই এদিন কামিন্সের কাছে ছিল না।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, একে খারাপ আবহাওয়া নিয়ে একটা উৎকন্ঠা, তারসঙ্গে ভারতের পাহাড় প্রমাণ রানের চাপ কিছুটা হলেও কামিন্সের মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল। আর সেই ফায়দা তুলতে সমর্থ হয়ে যায় ভারত। সামির বলে একদম বোল্ড হয়ে যান কামিন্স। এর পরের অস্ট্রেলিয়ার টেল এন্ডাররা আর কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। হ্যান্ডসকম্ব ফিরে যেতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপ। একমাত্র কিছুটা প্রতিরোধ এসেছিল হ্যাজেলউড ও স্টার্কের কাছ থেকে। কুলদীপ যাদব ৫ উইকেট, সামি ও জাদেজা ২ টি করে এবং বুমরাহ ১ উইকেট ঝুলিতে পোড়েন। ৩০০ রানে থমকে গিয়ে ফলো-অন করতে বাধ্য হয় অস্ট্রেলিয়া।
দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৪ ওভারের খেলা হতেই খারাপ আবহাওয়ার জন্য খেলা বন্ধ করে দিতে হয়। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ৮টি পিলারের ফ্লাড-লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকী আলোর উজ্জ্বলতাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সময় আচমকাই আকাশে মেঘ পরিস্কার হয়ে যায়। কিন্তু, ফের চারিদিক কালো হতেই পকেট থেকে লাইট-মিটার বের করেন আম্পায়ার। এরপরই খেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা। যদিও, দ্বিতীয় ইনিংসের এই চার ওভারের মধ্যেই বুমরাহের বলে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার হ্যারিস আউট হতে হতে বেঁচেছেন। খারাপ আলোয় খেলা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত ভারতের প্রথম ইনিংসের রান থেকে ৩১৬ রানে পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া। হাতে ১০ উইকেট।
বৃষ্টির জন্য মেলবোর্ন টেস্টেও সাময়িক ব্যাঘাত ঘটেছিল। কিন্তু, তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। সিডনি টেস্টে ভারতীয় দল ব্যাটিং ও বোলিং-এ অস্ট্রেলিয়াকে এখন পর্যন্ত টেক্কা দিয়েছে। এই টেস্টেও ভারতের দিকেই জয়ের পাল্লা ভারী। আর সিডনি টেস্ট বিরাটরা জিতে নিলে এক নয়া নজিরও স্থাপন হবে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় তো হবেই সেই সঙ্গে ২-১ ফলে সিরিজ জয়ের রেকর্ড অনেক দিন পর্যন্তই টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা।