'পোয়েটিক জাস্টিস', চ্যাপেল নন, বারবার ফিরে আসেন সৌরভ
ঠিক ১৪ বছর আগে ভারতীয় ক্রিকেটে ঘটে গিয়েছিল এক অবাঞ্ছিত ঘটনা। বিদেশি গ্রেগ চ্যাপেলের কলকাঠিতে সামিল হয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম ভারতের ক্রিকেট মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত করেছিলেন স্বদেশীরা।
ঠিক ১৪ বছর আগে ভারতীয় ক্রিকেটে ঘটে গিয়েছিল এক অবাঞ্ছিত ঘটনা। বিদেশি গ্রেগ চ্যাপেলের কলকাঠিতে সামিল হয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম ভারতের ক্রিকেট মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত করেছিলেন স্বদেশীরা। মুখ ফিরিয়েছিল বিসিসিআই। সেদিনও স্বমহিমায় ফিরে এসেছিলেন মহারাজ। ব্যাট হাতে ২২ গজে কামাল দেখিয়েছিলেন। আবারও ফিরে এলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বিসিসিআই-র সভাপতি হয়ে তাদেরই সেই অবহেলার যোগ্য জবাব দিলেন বাংলার মহারাজ। 'পোয়েটিক জাস্টিস' বোধহয় একেই বলে।
আচমকা অধিনায়কত্ব
২০০০ সালের ম্যাচ ফিক্সিং ও বেটিং কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্বের ব্যাটন আচমকাই তুলে দেওয়া হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে। যে দায়িত্ব নিতে কেউ রাজি ছিলেন না, তিনি শক্ত হাতে তারই হাল ধরেন। যুবনীতি আমদানি করে ভারতীয় দলকে সাফল্যের রাস্তায় ফিরিয়ে আনেন বাংলার মহারাজ। তাঁর হাত ধরেই ভারতীয় দলে হরভজন সিং, বীরেন্দ্র শেহবাগ, যুবরাজ সিং, মহম্মদ কাইফ, জাহির খান, এমএস ধোনি, ইরফান পাঠান, গৌতম গম্ভীরের মতো তারকা ক্রিকেটারদের ভারতীয় দলে সুযোগ হয়। মহারাজের নেতৃত্বেই ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছয় টিম ইন্ডিয়া। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের নির্মাতাও সৌরভকেই ধরা হয়ে থাকে।
চ্যাপেল অধ্যায়
২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেলকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ করার জন্য মত দিয়েছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে মহারাজের সঙ্গেই সংঘাতে জড়ান চ্যাপেল। সৌরভের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয় বিসিসিআই-র অন্দরমহলেও। কিরণ মোরের নেতৃত্বাধীন ভারতের নির্বাচকমণ্ডলী অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি সৌরভকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়। পরিবর্তে টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক বাছা হয় 'নরমপন্থী' রাহুল দ্রাবিড়কে।
ফিরে আসা এবং অবসর
এত বড় অবাঞ্ছিত ঘটনার জবাব মুখে দেওয়া সমীচিন মনে করেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ফের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন তিনি। রঞ্জি ট্রফিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সৌজন্যে ২০০৭ সালে ফের ভারতীয় দলে ডাক পান মহারাজ। এরপরের এক বছর ৬১.৪৪-র গড়ে টেস্টে ১১০৬ রান করেন সৌরভ। তার মধ্যে তিনটি শতরান (একমাত্র দ্বিশতরান) ও চারটি অর্ধ শতরান আসে মহারাজের ব্যাট থেকে। ওয়ান ডে-তে ৪৪.২৮-র গড়ে ১২৪০ রান করেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কেরিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজে ৫৪-র গড়ে ৩২৪ রান এসেছিল সৌরভের ব্যাট থেকে। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে রাজার মতো অবসর নিয়ে দেশের নির্বাচক তথা বিসিসিআই-কে উচিত জবাব দিয়েছিলেন মহারাজ।
দ্বিতীয় জবাব
ক্রিকেটকে পাকাপাকি ভাবে বিদায় জানানোর পর অন্য ভূমিকায় দেখা যায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে নিজের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন বাংলার মহারাজ। ২০১৫ সালে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল বা সিএবি-র সভাপতি নির্বাচিত হন সৌরভ। ২০১৯ সালে তিনি একই পদে পুনর্নির্বাচিত হন। বিসিসিআই-র সভাপতি হয়ে তাদেরই ১৪ বছর আগের অবহেলার যোগ্য জবাব দিলেন বাংলার মহারাজ। 'পোয়েটিক জাস্টিস' ছা়ড়া একে আর কী-ই বা বলা যায়।