আইপিএলে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলতে পারে করোনা, বিসিসিআই-র পদক্ষেপই বা কী হতে পারে?
আইপিএলে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলতে পারে করোনা, বিসিসিআই-র পদক্ষেপই বা কী হতে পারে?
বিশ্ব জুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া নোবেল করোনা ভাইরাস কিন্তু ইতিমধ্যেই ভারতে ঘাঁটি গেড়েছে। সংখ্যা কম হলেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে দেশের সবর্ত্র। এই পরিস্থিতিতে ভারতে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএল আয়োজন করা কতখানি সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সব মহলে। তার আগে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন উপায়ে এবং কোথায় কোথায় আইপিএলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে নোবেল করোনা ভাইরাস।
কবে থেকে শুরু
আগামী ২৯ মার্চ শুরু হচ্ছে ২০২০-র ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। মুম্বই-র ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে হবে টুর্নামেন্টের ১৩তম সংস্করণের প্রথম ম্যাচ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন তথা রোহিত শর্মা নেতৃত্বাধীন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মুখোমুখি হবে গত বারের রার্নাস তথা মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। ম্যাচ ঘিরে যেমন আগ্রহ বাড়ছে, ততটাই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে নোবেল করোনার প্রভাবে আইপিএল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিসিসিআই-র আশ্বাস
যদিও করোনা ভাইরাস আইপিএলে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই আশ্বাস দিয়েছে বিসিসিআই। ক্রিকেটার এবং দর্শকদের সুরক্ষিত রাখতে তাঁরা আগেভাগে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবু মানুষের মন থেকে ভয় যে কিছুতেই যাচ্ছে না। আইপিএলের ব্যাপকতা এতটাই যে সেখানে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে আশঙ্কা।
আইপিএলের ভিড়
বিসিসিআই-র হিসেব অনুযায়ী ৭০ কিংবা তার বেশি বিদেশি ক্রিকেটার এবারের আইপিএলে অংশ নিতে চলেছেন। প্রায় বারো জন এলিট প্যানেলের আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি, একাধিক ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক বিভিন্ন দেশ থেকে টুর্নামেন্ট উপলক্ষ্যে হাজির হবেন ভারতে। তাঁদের মাধ্যমে ভারতে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের যে আটটি মাঠে হবে আইপিএলের ম্যাচ, সবকটি স্টেডিয়ামে কমপক্ষে তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার মানুষ একসঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারেন। কোথাও আবার সেই সংখ্যা সত্তর হাজার ছুঁই ছুঁই। সেই ভিড়ের মধ্যে যদি কোনও করোনা আক্রান্ত মানুষ থেকে থাকেন, তাঁকে খুঁজে বের করার কাজ সহজ হবে বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানত দুই শহরে নজরে
ইতিমধ্যে ভারতের ৩১ জন নোবেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। অধিকাংশই দিল্লি বা বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা বলে জানানো হয়েছে। এই দুই শহরে রয়েছে অরুণ জেটলি (ফিরোজ শাহ কোটলা) স্টেডিয়াম ও এম চিন্নাস্বামীর মতো বড় দুটি ক্রিকেট মাঠ। টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক বিরাট কোহলি নেতৃত্বাধীন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ও শ্রেয়স আইয়ারের দিল্লি ক্যাপিটালসের ফ্যান-ফলোয়ার্সের সংখ্যা কম নয়। দুই শহরে অন্তত সাতটি করে আইপিএল ম্যাচ তো হবেই হবে। খেলা দেখতে মাঠে ভিড়ও জমাবেন দর্শকরা। কোনওভাবে আইপিএল শুরু হওয়ার পর করোনা লাগামছাড়া হয়ে গেলে, দুই মাঠে আইপিএলের ম্যাচ কোন সাহসে আয়োজন করবে বিসিসিআই, সেই প্রশ্নও উঠছে। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্ল্যান বি রয়েছে কিনা, তাও জানতে চান বিশেষজ্ঞরা।
কোনও কারণে করোনা ছড়িয়ে পড়লে
বিসিসিআই যতই আশ্বাসবাণী দিক, আইপিএলের জেরেই দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শিবির তার ক্ষতিপূরণ ভরার জন্য কতটা তৈরি, তাও জানতে উদগ্রীব দেশ।
একান্তই না হওয়া কী সম্ভব
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আইপিএলের সঙ্গে জুড়ে থাকে ব্রডকাস্টার, ফ্রাঞ্চাইজি, স্পনসরারদের কোটি কোটি টাকা। করোনা ভাইরাসের জেরে আইপিএল বন্ধ হয়ে গেলে বিরাট অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়বে বিসিসিআই। পরোক্ষে তার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও।
দর্শক শূণ্য স্টেডিয়াম
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দর্শক শূণ্য স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি সরকার। তা আইপিএলের ক্ষেত্রে করা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ দেশের আটটি মাঠে আইপিএলের প্রতি ম্যাচে দর্শকদের কাটা টিকিট থেকে বিসিসিআই যে অর্থ উপার্জন করে, তা বন্ধ হয়ে যাবে। সেই ক্ষতিও মাপা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরে করা কি সম্ভব
আইসিসি প্রকাশিত বিশ্ব সূচি অনুযায়ী চলতি আইপিএলের পর এশিয়া কাপ এবং পুরুষদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলতে যাবে ভারতীয় ক্রিকেট দল। এই পরিস্থিতিতে আইপিএল পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ বছর আর স্থান খালি নেই বলে মনে করা হচ্ছে।